শরবতের গ্লাসে স্বপ্ন দেখে আলীম

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আব্দুল আলীম। কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। সবাই যখন খেলার মাঠ কিংবা ক্যাম্পাস আড্ডায় ব্যস্ত, ঠিক তখনই শরবত বিক্রিতে ব্যস্ত আলীম। বিকেল হলেই ক্যাম্পাসের জিয়া মোড়ে ব্যস্ততা বাড়ে তার। বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সেখানে শরবত বিক্রি করে সে। সকল হীনম্মন্যতাকে দূরে ঠেলে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর আলীম। সেই স্বপ্ন সফল করতে শিক্ষার্থী অবস্থাতেই শরবতের গ্লাসকে বেঁচে নিয়েছে সে।

আব্দুল আলীম ক্যাম্পাস জীবনের শুরু থেকেই প্রাইভেট পড়াত। সে জন্য ক্যাম্পাস থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে কুষ্টিয়া শহরে নিয়মিত যেতে হতো তাকে। শহরে যেতে আর ফিরতে সময় লাগত ২ ঘণ্টা। প্রাইভেট পড়িয়ে যে টাকা আসত তা দিয়েই চলতো ক্যাম্পাস জীবন। কিছুটা পরিবারও সহযোগিতা করত। এভাবেই ক্যাম্পাস জীবনের দুই বছর কাটিয়েছে আলীম। কিন্তু এ বছরের শুরুতে এসে সকল হীনম্মন্যতাকে পাশ কাটিয়ে শরবতের গ্লাসে স্বপ্ন বাঁধে আলীম। ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শরবত বিক্রির প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করে সে। প্রথমে একটি টেবিলে কয়েক রকমের শরবত বিক্রি শুরু করে আলীম। শুরুর দিকে কাজটি তেমন সহজ ছিল না। চারিদিক থেকে আসতে থাকে নানান কথা। কিন্তু আলীম থেমে যায়নি। সকল বাঁধাকে উপেক্ষা করে দিনের পরিক্রমায় শরবত বিক্রি বাড়তে থাকে তার।

আলীমের টেবিলে বিক্রির জন্য কয়েক রকমের শরবতের মধ্যে রয়েছে লেবু, বেল, পেঁপে, তরমুজ, কাঁচা আম ও ইসব গুল। এছাড়াও বিখ্যাত ঢাকাইয়া লাচ্ছি তৈরিতে পারদর্শী আলীম।

গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহ আর রমজানে বিক্রি বেড়েছে আলীমের। ক্যাম্পাসের শিক্ষক,শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা বিকেল হলেই তার দোকানে ভিড় করে। এভাবেই শরবতের গ্লাসে এগোচ্ছে আলীমের স্বপ্ন। তার স্বপ্ন পূরণে সাহস জোগাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সহপাঠী ও শিক্ষার্থীরা।

অন্যদিকে পড়ালেখাতেও সাফল্য রয়েছে আলীমের। প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় বিভাগে তৃতীয় স্থান দখল করে সে। সেই ধারা অব্যাহত রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছে সে।

দেশ রূপান্তরকে আব্দুল আলীম জানায়, ‘ছোটবেলা থেকে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখি। কিন্তু অর্থ ও সাহসের অভাবে এত দিন তা হয়ে ওঠেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে স্বপ্ন পূরণের সুযোগ পেয়েছি। ভবিষ্যতে দেশের একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চাই । এই বিশ্বাস থেকেই এখন পর্যন্ত সকল বাঁধা পেরিয়েছি।’

আব্দুল আলীমের এই কর্মকাণ্ডে ক্যাম্পাসের অনেকেই বিস্মিত হয়েছে। ঢাকা শহরে এমন দৃশ্যের দেখা মিললেও ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন দৃশ্যের দেখা মিলে না। এ বিষয়ে ইংরেজি বিভাগের হুমায়ুন কবীর শুভ বলেন, ‘আলীমের কর্মকাণ্ডে আমি মুগ্ধ। কারণ দেশে শিক্ষিতদের সংখ্যা বাড়ছে একই সাথে বেকারত্বও বাড়ছে। এর মূলে রয়েছে আমাদের হীনমন্যতা। সেই জায়গা থেকে আলীম বের হয়ে এসে শরবত বিক্রি করছে। যা ক্যাম্পাসের অন্য শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে।’

এ বিষয়ে আলীমের সহপাঠী বাংলা বিভাগের রেদওয়ান রনি জানায়, ‘প্রথম দিকে অনেকেই আলীমকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করত। কিন্তু এখন সবাই সাহস জোগায়। কারণ আলীমের মধ্যে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা রয়েছে। সে কখনো হীনমন্যতায় ভোগে না। এ বিষয়টি আমায় অনুপ্রেরণা দেয়।’

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর